কর্পোরেট ভালবাসা



সন্ধ্যা হতে চললো । আবিদ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে আছে । অফিস শেষে তার ২য় ও গুরুত্বপূর্ন কাজ হচ্ছে বাস পাওয়া । মাঝে মাঝে বাসের জন্য দাঁড়িয়ে থাকতে তার অসয্য লাগে । মনে মনে ভাবে কিছু টাকা হলেই একটা বাইক কিনে ফেলবে । এভাবে দাঁড়াতে আর ভালো লাগেনা ।

তবুও সে দাঁড়ায়, অনি নামের মেয়েটা আসবে বলে । মেয়েটা আসেও । কোন কারন ছাড়াই আসে । কেন আসে ? এর উত্তর সে নিজেও যানেনা । অনি মেয়েটার বিয়ে হয়েছে । স্বামী বিদেশ থাকে । চাকরি করতো স্বনামধন্য এক মাল্টিন্যাশনাল একটা কম্পানিতে ।
পরে পদোন্নতি পেয়ে বিদেশ চলে যায় । অনিকেও যেতে বলেছিল । সে বলেছিল বিদেশ যদি যেতেই হয় তবে সে নিজের যোগ্যতায় যাবে। বোধহয় তাদের মধ্যে পদন্নতির ঠান্ডা যুদ্ধও চলছিল । হতেই পারে । কর্পরেট সংস্কৃতির যুগে এর থেকে বেশি কিছু আসা করা যায়না ।

এর মধ্যে হঠাৎ বাসের হর্নের শব্দে আবিদের কল্পনার চৌতন্য ভাঙে । বাসটা খালিই আছে চাইলে উঠা যায় । কিন্তু তার উঠতে ইচ্ছে করছে না । বাস ষ্টেশনে বসেই আরো কিছুক্ষন ভাবতে ইচ্ছে করছে । আজ যেন তাকে ভাবনার ভুতে পেয়েছে । সে নিজেও ভুত তাড়াতে চাইছে না । মাঝে মাঝে এমন উদাসি ভাবনা ভাবতে তার ভালোই লাগে ।

এর মাঝেই মনে পড়ে, অনি একদিন বলেছিল তার হাজবেন্ড আসিফ ভাই নাকি মালেশিয়ায় আরেকটা বিয়ে করেছে । আবিদ চাইলেই বলতে পারতো, আপনি তার সাথে গেলেই পারতেন।
কিন্তু বলেনি । বললে যদি অনি আর না আসে । এজন্য নিজেকে কিঞ্চিৎ স্বার্থপর মনে হলেও তার খারাপ লাগেনা । ভাগ্য ভালো তাদের সন্তান নেই । আসলে চাকরি আর পদোন্নতির দৌড়ে জিততে গিয়ে ভালবাসার জীবন তাদের থেকে হারিয়ে গেছে ।
আসিফ ভাই অবশ্য তাদের বিয়ের বছর দুয়েক পরেই সন্তান নেবার ইচ্ছা অনিকে জানিয়েছিলেন । কিন্তু অনি বলেছিল এখন ক্যারিয়ার গড়ার সময় তাই এখন সন্তান নেয়া ঠিক হবে না । কিন্তু আবিদের কেন জানি মনে হচ্ছে সন্তান না নিয়ে তারা ভালোই করেছে ।
এখন তো স্রেফ রাত কাটানোই হচ্ছে ফ্যাশান । ইংরেজিতে বলা হয় One Night Stand ।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক , টুইটার বা ভাইবারে চ্যাট থেকে প্রেম আর খুব সহজেই লিটনের ফ্ল্যাটে ডেটিং ।

যার শেষ হয় ৯ মাস পর কোনো এক কুকুরের খাবার হয়ে । শেষ পর্যন্ত অনির সন্তানের ভাগ্যে এমন হত কিনা কে জানে ? হয়তো আসিফ সাহেবের উপর অভিমান করে বাচ্ছাকে ফেলে দিত খালের কাঁদা পানিতে নয়তো এবরশন করিয়ে ফেলে দিত কোন ক্লিনিকের বাথরুমের ফ্ল্যাশে ।

আবিদ মনে করে, সে হিসেবে আমরা অনেক ভাগ্যবান । অন্তত আমরা বাবা মায়ের ভালোবাসা পেয়েছি । আমাদের মা বাবা এখনকার আধুনিকাদের মত হলে হয়তোবা আমাদের ভাগ্যেও এমন ঘটতো । আবার কিছু সন্তান, এদের থেকেও খারাপ যাদের বাবা মা লালন পালন করেছে । আর তারাই তাদের বাবা মা দের পাঠিয়েছে বৃধাশ্রমে ।
আসোলে এখন সবই কর্পরেট । ভালবাসাটাও কর্পরেট । বাবা মা যুগের সাথে তাল মেলাতে পারেনি তাই তাদের বৃধাশ্রমে পাঠানো হয়েছে ।

আবিদ ভাবে, মানুষ আগে থেকে ভবিষ্যত পড়তে পারলে খুবই ভাল হত । তাহলে যে সব ছেলে মেয়ে বাবা মাকে বৃধাশ্রমে পাঠানোর কথা ভাবতো । তাদের এ যুগের আধুনিকাদের মত সন্তানকে কুকুর কে খাইয়ে দিলে ভালো হত ।
হঠাৎ আবিদের ভাবনাতে ছেদ পড়ে । অনির গলার আওয়াজ শুনে ।

কিন্তু আবিদের এখন মনে হচ্ছে অনির সঙ্গ দেয়া তার ঠিক নয় । কারন, অবিবাহিত নারীর চেয়ে বিবাহিত নারী ভয়ংকর । তাছাড়া সে যা করছে তা অন্যায় । মানুষের মন কখন কি চেয়ে বসে আর মনের হুকুমে মানুষ কখন কি করে বসে তার ইয়ত্তা নেই ।
আবিদ লক্ষ করলো এই সামান্য কুড়ি মিনিটের ভাবনা তাকে আমুলে বদলে দিয়েছে ।

না না । আবিদ তার পিতৃত্ব তার পুরুষত্ব কে কলুষিত করতে চায়না । সে চায় তার জন্য অপেক্ষমান কাংক্ষিত নারী শুধু তারই থাকুক সে শুধু হবে সেই অদেখা নারীর । তাদের পরিবারে অবিরাম ভালবাসা থাকবে, তবে এখনকার কর্পরেট ভালবাসার মত নয় ।

আবিদ বাসের জন্য অপেক্ষা না করে হাটতে থাকে। এ পৃথিবীতে তার সবই অচেনা সে না হয় চিনে নেবে এভাবেই অনির মত অন্য কাউকে... ।।
Previous
Next Post »

আপনি কি কুবের কে কিছু বলতে চান? তাহলে সেটা মন্তব্য করে ফেলুন এখনি! EmoticonEmoticon